ভূমিকা:
রাজশাহী শহর বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত বিভাগীয় সদর দপ্তর যাহা পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত । ইহা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম শহর এবং দেশের ১১টি পৌর কর্পোরেশনের একটি । রাজশাহী পৌরসভা ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । ইহা তদানিন্তন অখন্ড ভারতের প্রথম পৌরসভা গুলোর মধ্যে একটি । ১৯৮৭ সালে রাজশাহী পৌরসভা ৪৮.৪৭ বর্গ .কি.মি এলাকা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনে রুপান্তরিত হয় । বর্তমানে পৌর এলাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৯৩.৪৭ বর্গ কি.মি উন্নীত হয়েছে । এখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান তেমন গড়ে না উঠলেও অনেক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে । রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপক রেশম চাষ পরিলক্ষিত হয় এবং বাংলাদেশের একমাত্র রেশম গবেষণাগারটিও রাজশাহী নগরীতে অবস্থিত বিধায় রাজশাহী শহরকে রেশম ও শিক্ষা নগরী বলা হয় । রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান জনসংখ্যা বস্তী ও ভাসমান জনগোষ্ঠি সহ প্রায় ৯ লক্ষ । এই শহরটির দৈঘ¨ ১২ কি.মি. এবং প্রস্থ ৮ কি.মি.
বিবর্তনের ইতিহাস:
১৯৩৭ সালে তৎকালীন ভারতের কলকাতার পূর্ত মন্ত্রনালয়ের পানি সরবরাহ শাখার উদ্যোগে রাজশাহী পৌরসভার অধিনে প্রথম রাজশাহী শহরে পানি সরবরাহ ব্যাবস্থা চালু হয় । এই সরবরাহ ব্যাবস্থায় নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের লক্ষ্যে পুঠিয়ার রানী হেমন্ত কুমারীর ২.৫ লক্ষ টাকা দান সহায়তায় ১৯৩৭ সালে ৪৭০ গ্যালন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ১০০টি খাড়া জলাধার রাস্তার পাশে স্থাপিত হয় যাহা স্থানীয় ভাবে “ঢোপ কল” নামে পরিচিতি পায় । আজও শহরের অনেক জায়গায় এই ঢোপ কল গুলো পানি সরবরাহের ঐতিহ্য নিয়ে দাড়িয়ে আছে এবং পৌর বাসীর পানির চাহিদা পূরন করছে । এই ঢোপ কলগুলো কেন্দ্রীয় ভাবে নির্মিত হেতম খাঁ অবস্থিত আয়রণ ও শক্ত দ্রব্যাদি দুরিকরণ শোধনাগারের সাথে যুক্ত ছিল এবং একটি ওভারহেড সার্ভিস জলাধার স্থাপিত ছিল । হেতম খাঁ অবস্থিত এই পানি শৌধনাগারটির ক্ষমতা ছিল প্রতিদিন ৭০০ ঘন মিটার । ১৯৬৫ সালে এই পানি শোধনাগারটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয় ।
১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও নেদারল্যান্ড সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার রাজশাহী পানি সরবরাহ মহা পরিকল্পনা নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে । এই প্রকল্পের অধিনে ৪টি ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগার ৩০টি গভীর নলকুপ ২৩১.৪৮ কি.মি. পাইপ নেটওয়ার্ক জালের মত ৯৩.৩৪ বর্গ কি.মি অঞ্চলে স্থাপন করা হয় । ২০০০ সালে এই ব্যাবস্থায় ৭ লক্ষ জনসংখ্যার পানির চাহিদা পূরনের জন্য নকশা করা হয় । বর্তমানে ৭০% জনসংখ্যা পাইপ লাইনের মাধ্যমে এবং ৩০% জনসংখ্যা হস্তচালিত নলকুপের সাহায্যে তাদের পানির চাহিদা পূরন করছে । পানি ব্যাবস্থাপনার শৃঙ্খলা আনয়নের লক্ষে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন উচু জলাধার নির্মান করে । উল্লেখ্য যে ডাচ সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের সিমাবদ্ধতার কারণে ইহা পৌরবাসীর পানির চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না । প্রায় ১০ বছর পরে সিটি কর্পোরেশন স্ব-উদ্দ্যোগে কিছু গভীর নলকুপ ও পাইপ লাইন স্থাপন করে কিন্তু ইহাও দ্রুত বর্ধন চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয় ।
পানি সরবরাহ ও পয়:নিষ্কাশন শাখা ২০১০ সালের ১লা, আগাষ্ট রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন হতে আলাদা হয়ে যায় এবং রাজশাহী ওয়াশা নামে রাজশাহী পৌর এলাকার পানি সরবরাহ ও পয়:নিষ্কাশনের একক কতৃপক্ষ হিসাবে একটি সতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গঠিত হয় ।
রাজশাহী ওয়াশা ২০১১ সালের ১০ই মার্চ শাল বাগানে অবস্থিত পানি শোধনাগার হইতে কার্যক্রম শুরু করে এবং অদ্যবদি এটাই রাজশাহী ওয়াশার প্রধান কার্যালয় হিসাবে পরিচালিত হচ্ছে ।